September 8, 2024, 1:06 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
৯০ বছর পর উদ্ধার হলো ২শ কোটি টাকা মূল্যের দেবোত্তর সম্পত্তি

৯০ বছর পর উদ্ধার হলো ২শ কোটি টাকা মূল্যের দেবোত্তর সম্পত্তি

প্রায় ৯০ বছর ধরে বেহাত হওয়া রাজধানীর মতিঝিলে টয়েনবি সার্কুলার রোডে ‘শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ মন্দির বিগ্রহ’ নামে প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ৩০ শতাংশ দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধার করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। উদ্ধার করা জমি হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর ট্রাস্টের নিজস্ব সম্পত্তি উল্লেখ করে উদ্ধার হওয়া জমিতে ব্যানার টানানো হয়েছে। এখানে নতুন করে মন্দির নির্মাণ করা হবে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে অভিযানটি পরিচালনা করেন মতিঝিল রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল হাসান। সনাতন ধর্ম মতে দেবতার নামে উৎসর্গ করা সম্পদকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলে। আইন অনুযায়ী দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি ও ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করার কোনো সুযোগ নেই।

জানা যায়, মতিঝিল মৌজার সিএস ১০/৪৩৩ নং দাগ, এসএ ২৪২২নং দাগ ও আরএস ২২৩৪ দাগের শূন্য দশমিক ৩৮ একর ভূমি এবং সিটি ২৮৭০নং দাগের শূন্য দশমিক ২৯৭৪ একর ভূমি সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডের ধারাবাহিকতায় শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ ঠাকুর ম্যানেজিং সেবাইত সুজিত কুমার বসু, পিং সচিন্দ্র নাথ বসু, সাং ৩নং হরিশ চন্দ্র বাবু স্ট্রীট বাংলাবাজার, ঢাকা-এর নামে সর্বশেষ সিটি রেকর্ড রয়েছে। এ সম্পত্তি সেবাইতরা রক্ষণাবেক্ষণ না করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অবৈধ স্থাপনা ও দোকানঘর করে দীর্ঘদিন যাবত ভোগ দখল করছেন। এরপর দখলদাররা জমি নিজেদের দাবি করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল হাসান কালবেলাকে জানান, সব রেকর্ডে এ জমিটি দবোত্তর সম্পত্তি বলে প্রমাণিত হয়েছে। ৮০ থেকে ৯০ বছর আগে এখানে মন্দির ছিল। প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে মন্দির না থাকলেও সর্বশেষ রেকর্ডে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির নামে জমিটি রেকর্ডভুক্ত। রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ৩০ শতাংশ দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করে রেখেছিল। ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় উচ্ছেদ অভিযানের মধ্য দিয়ে সম্পত্তি উদ্ধার হলো।

জানা গেছে, সেবাইতদের সঙ্গে আঁতাত করে মোহরউদ্দিন নামে এক দখলদার জমিটি দখল করেন। তিনি সেখানে ফার্নিচারের দোকান ও হোটেল ভাড়া দেন। ভাড়ার প্রতি মাসের অর্থ নিজেই নিয়ে নিতেন। তাই অভিযান শুরুর আগে থেকে এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় অবৈধ সব রকমের স্থাপনা। ভাড়াটিয়ারা জানিয়েছেন, বছরের পর বছর মোহরউদ্দিন এসে ভাড়া আদায় করতেন। আরও জানা যায়, নির্মাণাধীন এ ভবন ভেঙে এখানে নতুন মন্দির তৈরি করা হবে। কিছুদিন আগে এখানে আনসার ক্যাম্প ছিল। সেটি সরানোর পর প্রভাবশালী একটি মহল ক্রয়সূত্রে মালিকের ভুয়া কাগজ দেখিয়ে জায়গাটি দখল করে। পরে বিষয়টি মন্দির কমিটির নজরে এলে ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় এ উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে।

হিন্দু ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ জমি অবৈধ দখলদারদের হাতে ছিল। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের সম্পত্তি ফিরে পেতে আবেদন করি। পরে তিনি এসিল্যান্ডের মাধ্যমে তদন্ত করেছেন যে, এটি দেবোত্তর সম্পত্তি কি না। তদন্ত শেষে সত্যতা পাওয়ায় তারা এটি হিন্দু ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্টকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। আমরা এখানে একটি মন্দির নির্মাণ করব। আগেও এখানে মন্দির ছিল। এ সময় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলছি এ জমিটি অবৈধভাবে কেনাবেচার মধ্যে আমাদের সেবাইয়েতরা যুক্ত ছিলেন। আজ জমিটি উদ্ধারের মধ্যদিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেল। আমরা জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।

সম্পত্তি উদ্ধার অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা নির্মল গোস্বামী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা, বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার রতন দত্ত, ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার পার্থ সারথি প্রমুখ।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com